আমার নাম ইমরান — যখন কবিতা হয়ে ওঠে জীবনের আশ্রয়
কাশ্মীরের শরতের হিমেল হাওয়ায়, চেনার পাতার মৃদু শব্দের মাঝে, এক চলচ্চিত্র নিঃশব্দে জয় করে নিলো দর্শকদের হৃদয়। আমার নাম ইমরান — নামটি যেন শুধু একটি সিনেমা নয়, এক জীবন্ত গল্প, এক সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি। কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত এই ছবিটি শুধু পর্দায় নয়, মানুষের মনে গেঁথে গেলো গভীরভাবে।
আভিষেক গাঙ্গুলির পরিচালনায়, Cinema For A Cause-এর নিবেদন আমার নাম ইমরান একটি আত্মিক যাত্রা — বাইপোলার ডিসঅর্ডারের সঙ্গে লড়াইয়ের, আত্ম-অন্বেষণের, এবং শিল্পের মাধ্যমে মুক্তির। ইমরান চৌধুরী, যিনি এই ছবির প্রাণ, নিজের যন্ত্রণাকে রূপ দিয়েছেন কবিতায়। তাঁর শায়েরি যেন এক সেতু — হতাশা থেকে আশার দিকে, অন্ধকার থেকে আলোয়।


এই ছবির সবচেয়ে স্পর্শকাতর মুহূর্ত ছিল যখন ইমরান নিজে উপস্থিত ছিলেন শ্রীনগরের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। তিনি শুধু অভিনেতা নন, বাস্তব জীবনের যোদ্ধা। দর্শকদের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন নিজের গল্প — কীভাবে মানসিক রোগের সঙ্গে লড়াই করে তিনি কবিতায় খুঁজে পেয়েছেন মুক্তি। তাঁর কথা শুনে দর্শকরা শুধু প্রশংসা করেননি, তাঁকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেছেন।


আমার নাম ইমরান কোনো দুঃখগাথা নয়, বরং এটি এক সাহসিকতার জয়গান। ছবিটি আমাদের শেখায়, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা দুর্বলতা নয় — এটি শক্তির প্রকাশ। ইমরানের কবিতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রতিটি অদৃশ্য যুদ্ধে লড়াই করা মানুষই একেকজন নায়ক।
এই সিনেমা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়, শিল্পের শক্তি কতটা গভীর। এটি শুধু একটি চলচ্চিত্র নয় — এটি এক আন্দোলন, এক আহ্বান। ইমরানের কণ্ঠস্বর যেন এক বিপ্লব, যা বলে — “আমি আছি, আমি বলছি, এবং আমি বাঁচছি।”
শেষমেশ, আমার নাম ইমরান আমাদের মনে করিয়ে দেয় — নিরবতা ভাঙলেই শুরু হয় আরোগ্য। আর সেই ভাঙা নিরবতার শব্দ যদি হয় কবিতা, তবে তা হয়ে ওঠে জীবনের গান।

